প্রত্যাশা শুরু হয়েছিল ২০২৩ বিশ্বকাপের আগে। আইপিএলে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে শেষ ম্যাচে নেতৃত্ব দিলেন। এই দীর্ঘ সময় অনেক কিছু ঘটে গেল হার্দিক পান্ডিয়ার জীবনে। বিশ্বকাপে চোট পেয়ে ছিটকে যাওয়া থেকে আইপিএলে নাটকীয় দল পরিবর্তন। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে প্রথমবার নেতৃত্ব দিতে এসে ব্যর্থতা। কোটি কোটি ক্রিকেট অনুরাগীদের চক্ষুশূল। হার্দিক কতটা নিজেকে ভাঙলেন, কতটা গড়তে পারলেন নিজেকে!
হার্দিককে নিয়ে প্রত্যাশার মঞ্চ
ঠিক কীভাবে শুরু হয়েছিল এই প্রেক্ষপট! ২০২২ সালে আইপিএলে নতুন টিম হিসেবে সংযুক্ত হয় গুজরাত টাইটান্স। হার্দিককে অধিনায়ক ঘোষণা করা হয়। প্রথম মরশুমেই গুজরাতকে চ্যাম্পিয়ন করেন হার্দিক। পিঠের চোট কাটিয়ে আইপিএলে ফিরেই দুরন্ত পারফরম্যান্স করেন তিনি। প্রায় এক বছর ওই চোটের কারণে জাতীয় দলে অনিশ্চিত ছিলেন। আইপিএলে তাঁর কামব্যাক নিয়ে প্রশংসা হয় সব মহলেই। ক্রিকেটবোদ্ধারা মনে করেন, ঘরের মাঠে ওয়ানডে বিশ্বকাপে হার্দিকের মতো অস্ত্র থাকলে, রোহিতের সুবিধা হবে। তাঁর মতো অলরাউন্ডার যে কোনও টিমের কাছেই ব্রহ্মাস্ত্র। প্রতিপক্ষের রাতের ঘুম কেড়ে নিতে পারেন।
স্বপ্নভঙ্গ
২০২৩ বিশ্বকাপে সেই অনুযায়ী হার্দিককে সহ অধিনায়ক রেখে দল ঘোষণা করে বোর্ডের নির্বাচক কমিটি। কপিল দেব থেকে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, প্রাক্তনীরাও ভেবেছিলেন, ঘরের মাঠে বিশ্বকাপে হার্দিক পান্ডিয়ার অলরাউন্ডার পারফরম্যান্স ব্রহ্মাস্ত্রের মতো কাজ করবে । কিন্তু বাংলাদেশ ম্যাচে গোড়ালিতে চোট পেয়ে বিশ্বকাপ অভিযান শেষ হয়ে যায় হার্দিকের। বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতের স্বপ্নভঙ্গ হয়। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে হারতে হয় টিম ইন্ডিয়াকে।
আইপিএল ট্রেড
হার্দিক পর্ব এখানেই শেষ হতে পারত। কিন্তু এবার আইপিএলের নিলামে হার্দিককে নিয়ে নতুন করে হাওয়া ওঠে ক্রিকেট মহলে। সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি খবর ছড়িয়ে পড়ে। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে যোগ দিচ্ছেন হার্দিক পান্ডিয়া। মিনি নিলামে হার্দিককে কেনার কোনও নিয়ম বহির্ভূত ছিল। কিন্তু আইপিএলের নিয়ম মেনে ট্রেডের মাধ্যমে হার্দিককে ১৫ কোটি টাকা দিয়ে কিনে নেয় মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। বলা হয়, হার্দিক নিজেই মুম্বইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁর এই ট্রেডে বিপদে পড়ে একসঙ্গে দুটি ফ্র্যাঞ্চাইজি। শেষ মুহূর্তে অধিনায়ক হারায় গুজরাত টাইটান্স। ক্যামেরুন গ্রিনকে আরসিবি-র কাছে ট্রেড করে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। সেই অর্থের বিনিময়েই হার্দিকের জন্য় বড় ট্রান্সফার ফি খরচ করে মুম্বই। শর্ত ছিল, রোহিতের পরিবর্তে দলকে নেতৃত্ব দেবেন তিনিই। সেই শর্তেই রাজি হয় টিম ম্যানেজমেন্ট।
মুম্বইয়ের আবেগ
পাঁচবার দলকে জয়ী করছেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। তাঁকে সরিয়ে ক্যাপ্টেন হলেন হার্দিক পান্ডিয়া। শুধু মুম্বই ইন্ডিয়ান্স বা হিটম্যান ভক্তরা নন, বিষয়টি ভাল ভাবে নেননি ক্রিকেট অনুরাগীরা। এমনও অভিযোগ ওঠে, যে প্রভাবশালী যোগে এই সুবিধা পেয়েছেন হার্দিক। গুজরাত টাইটান্সের বিরুদ্ধে খেলতে নেমে গ্যালারি থেকে কটূক্তি ভেসে আসে। রোহিতের নামে জয়ধ্বনি শোনা যায়। ঘরের মাঠে ওয়াংখেড়েতে সেই প্রতিবাদ আরও জোরালো হয়। গ্যালারি গমগম করে ওঠে হার্দিকের বিরুদ্ধে। হার্দিকের ব্যবহার নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। মাঠে রোহিতের মতো সিনিয়র ক্রিকেটারের সঙ্গে তাঁর ব্যবহার, জুনিয়রদের সঙ্গে তাঁর আচরণ ভাল ভাবে নেননি ক্রিকেট অনুরাগীরা। সোশ্য়াল মিডিয়ায় হার্দিককে নিয়ে ধেয়ে এসে হাজার হাজার সমালোচনা। ব্যক্তিগত স্বপ্নপূরণে সব কিছুই নির্লিপ্তভাবে মেনে নিয়েছেন হার্দিক। কিন্তু তাঁর আমলে আইপিএলের ইতিহাসে মুখ থুবড়ে পড়ল দল।
ভবিষ্যত কী বলছে
এবার সামনে T20 বিশ্বকাপ। রোহিতের ডেপুটি হিসেবে সুযোগ পেয়েছেন হার্দিক। তাঁর পারফরম্যান্সের দিকে নজর থাকবে ক্রিকেটপ্রেমীদের।
আইপিএলে মরশুমে কি হবে কেউই জানে না। ২০২৫-এর আইপিএল মরশুমের আগে মেগা নিলাম হবে। ২ জন ক্রিকেটার ছাড়া কাউকেই ধরে রাখতে পারবেন না কোনও ফ্র্যাঞ্চাইজি। তাই হার্দিকের ভবিষ্যত নিয়ে কী ভাবছে মুম্বই, তা এখনই বসে বলা সম্ভব নয়। বিশ্বকাপ থেকে আইপিএল, এই সময়টা হার্দিকের কাছে তো শিক্ষার। শিক্ষা প্রত্যেক ফ্র্যাঞ্চাইজি ও কোটি টাকার ক্রিকেট লিগেরও। শুধু অর্থের বিচারে ক্রিকেটকে দেখলে, অনেক সিদ্ধান্তের জন্য পস্তাতে হতে পারে। তা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় হার্দিকের দলবদল ও একটি ব্যর্থতার কাহিনি।