কারও কাছে তিনি ম্যাজিশিয়ান, কারও কাছে তিনি ফুটবলের ভগবান। তাঁর করা একের পর এক রেকর্ড তাক লাগিয়ে দিয়েছে গোটা ফুটবল দুনিয়াকে। লিওনেল মেসি। ২০০৫ সাল। ১৯ বছর আগে আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে অভিষেক। সিদেসাধা সেই ছেলেটি যে একদিন দেশকে বিশ্বকাপ এনে দেবেন, সেই সময় হয়তো কেউ ভাবেনি। ২০২২ সাল, কাতার বিশ্বকাপে ট্রফি জয় আর্জেন্টিনার। ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপ জেতে নীল-সাদা জার্সি। অধিনায়ক ছিলেন লিওনেল মেসি। যত বয়স বেড়েছে, তত পরিণত হয়েছেন। জীবনের বিভিন্ন বাঁকে এসে পাল্টায় অনেক অভ্যেস। বর্তমান সময় মাঠে লিওনেল মেসির শরীরী ভাষায় অনেক বদল এসেছে। মাঠে মেসিকে যারা দীর্ঘ সময় নিরীক্ষণ করেন, তাঁরা জানেন। মেসি একাধিকবার পিছনে ফিরে তাকান। কিন্তু কেন! এর কারণ কী!
২০০৪ সাল। বার্সেলোনা যোগ দেন লিওনেল মেসি। তাঁর ফুটবল জীবনের অন্যতম স্বর্ণালী অধ্যায় ছিল বার্সেলোনা। বার্সেলোনা থাকাকালীন তাঁর কোচ ছিলেন পেপ গুয়ার্দিওলা। তাঁর মতে, মেসি মাঠে যা করেন, তার পিছনে নির্দিষ্ট কারণ থাকে। একজন ফুটবলারের কাজ শুধুমাত্র মাঠে দৌড়ে যাওয়া নয়। মাঠের পরিস্থিতির দিকে তীব্র নজর রাখা। অ্যামাজন প্রাইমে একটি ফুটবল সিরিজের একটি অনুষ্ঠানে গুয়ার্দিওলা মেসিকে নিয়ে আরও একটি তথ্য দিয়েছেন। ম্যাচ চলাকালীন অধিকাংশ সময় হাঁটেন মেসি।
গুয়ার্দিওলা ওই অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন, "মেসি মাঠে হাঁটেন। এটা আমার খুব ভাল লাগে। ও কিন্তু খেলার বাইরে নেই। ওর মাথা দেখুন, এদিক-ওদিক ঘুরছে। পরিস্থিতি লক্ষ্য করছে। কী হতে চলেছে, সেটাও ও জানে। এক জায়গাতে কিন্তু দাঁড়িয়ে নেই। সব সময় মুভ করছে। দৌড়চ্ছেন না, কিন্তু সব সময় চলছে। বিপক্ষের রক্ষণের কোথায় দুর্বলতা, সেটা ভাল করে জানেন মেসি। পাঁচ থেকে দশ মিনিট পর, বিভিন্ন এলাকায় ওর চোখ ঘোরে। একটি ম্যাচে মেসির মাথা যা চলে, সেটা একটা প্যানোরমার কাজ করে। কোথায় শূন্যস্থান আছে, কোথায় কী পরিকল্পনা করতে হবে, সবটা জানেন। রক্ষণ যতই দুর্ভেদ্য হোক, মেসি তা পার করবেন। কোন পথে গেলে গোলের কাছাকাছি পৌঁছতে পারবেন, তা জানেন।"
প্রতিপক্ষ টিমে মেসি আছেন, এটাই যে কোনও রক্ষণের রাতের ঘুম কেড়ে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট। মেসি নিজেও জানেন, তাঁকে মার্ক করার জন্য উল্টো দিকের টিম নিজের ১০০ শতাংশ দেবেন। তাই নিজের পরিকল্পনা নিজেকেই তৈরি করে নিতে হয় মেসিকে। একটি সাক্ষাৎকারে মেসি নিজেও একথা জানিয়েছেন। আর্জেন্টিনার অধিনায়কের মতে, "কেরিয়ারের শুরুর দিকে যখন নেওয়েলসে ছিলাম, তখন মাঠে সব সময় দৌড়তাম। টিম অনেক বেশি দুর্বল ছিল। তবে বল ছাড়া দৌড়, এটা আমার পছন্দ নয়। সব সময় আমি আত্মবিশ্লেষণ করি। আমি নিজের ভুল ও ঠিক সবার আগে দেখতে পছন্দ করি। যখন আমি মাঠে হাঁটি, তখন বিপক্ষের পজিশন বুঝতে চেষ্টা করি। যখন বল ছাড়া দাঁড়িয়ে থাকি, কোনও মার্কার থাকে না, তখন কাউন্টার অ্যাটাকেরও সুযোগ থাকে।" মেসির মতে, জিপিএস, পরিসংখ্যান নিয়ে তিনি একেবারেই চিন্তিত নন। মেসি জানিয়েছেন, তাই মাঠে কতটা দৌড়লেন, তা নিয়ে কোনও দিনই ভাবেন না। বরং নিজের খেলাটা উপভোগ করতেই ভালবাসেন তিনি।
২০২২ সালে কাতার বিশ্বকাপ ছিল মেসির কাছে অ্যাসিড টেস্ট। ২০০৬, ২০১০, ২০১৪, ২০১৮। চারবার বিশ্বকাপ খেললেও দেশকে ট্রফি এনে দিতে পারেননি। ২০১৪ সালে দলকে ফাইনালে তুলেও জার্মানির বিরুদ্ধে হারতে হয় আর্জেন্টিনাকে। গোল্ডেন বল জিতেও কাঁদতে কাঁদতে মাঠ ছাড়তে হয় এলএম টেনকে। ২০২২ সালে বিশ্বকাপে নামার আগেই মেসি জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি বিশ্বকাপ জিততে না পারলে অবসর নেবেন। বিশ্বকাপ জিতিয়ে অবসরের সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে নেন। প্যারিস সাঁ জাঁ ছেড়ে মেজর সকার লিগের ইন্টার মায়ামিতে যোগ দেন লিওনেল মেসি।