'কতজন আসে, কতজন চলে যায়, সবার বিদায়ে সমান কষ্ট হয় না। রেকর্ডও তো কতজনই গড়ে। কিন্তু, খেলতে নেমে দর্শক ও অনুরাগীদের মনের এত কাছে পৌঁছেই বা যেতে পারে আর ক'জন! এমনই ছিলেন রাফায়েল নাদাল। চোট, যন্ত্রণা উপেক্ষা করে গত কয়েকবছর কোর্টে নেমেছিলেন। কিন্তু শরীর একেবারেই সায় দেয়নি। ২০২৪ তাঁর শেষ বছর। আগেই ঘোষণা করেছিলেন রাফায়েল নাদাল। স্পেনে ডেভিস কাপে দেশের হয়ে শেষবার নামবেন টেনিস মহাতারকা। শনিবার সৌদি আরবে সিক্স কিং স্ল্যাম ইভেন্টে বোধ হয় শেষবার মুখোমুখি হলেন নোভাক জোকোভিচ ও রাফায়েল নাদাল। আর একটি স্বর্ণালী অধ্যায়ের যবনিকা পতন। এমন লড়াইয়ের স্বাদ আর পাবে না টেনিসপ্রেমী। তাই তো ম্যাচের পর জোকোভিচের আকুতি, "একদিন হয়তো কোথাও কোনও বিচে নাদালের সঙ্গে বসব। হাতে আমাদের কোনও ড্রিঙ্ক থাকবে। জীবনের অন্য কোনও গল্প শুনব আমরা।"
সুরকির মাটিতে তিনিই সম্রাট, তিনিই শেষ কথা। ২২টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়, অলিম্পিক সিঙ্গলস ও ডাবলসে সোনা। তার মধ্যে ১৪বার ফরাসি ওপেনে লাল সুরকির মাটিতে চ্যাম্পিয়ন। ২০৯ সপ্তাহ টানা বিশ্বের এক নম্বর টেনিস প্লেয়ার ছিলেন তিনি। সুরকির কোর্টে টানা ৮১ ম্যাচ জয়। এমন অজস্র রেকর্ড নাদালের নামের পাশে রয়েছে। তবে রেকর্ডের নিরিখে বিচার না করেও নাদাল বিশ্বসেরাদের মধ্যে প্রথম সারিতে। ফর্মে থাকা নাদালের শরীরী ভাষা, অভিব্যক্তি, টেনিসের প্রতি নিষ্ঠা, জয়ের খিদে তাঁকে বাকিদের থেকে আলাদা করেছে। রজার ফেডেরার, অ্য়ান্ডি মারের পর নাদালের বিদায়। ফ্যাব ফোরের মধ্যে এখনও লড়াই করছেন নোভাক জোকোভিচ।
শনিবার নাদালের সঙ্গে শেষ ম্যাচ খেলতে গিয়ে তাই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন নোভাক জোকোভিচ। প্রদর্শনী ম্যাচে নাদালকে হারিয়ে কথা হারিয়ে ফেলেন জোকোভিচ। তাঁর মতে, "জানি না, কীভাবে শুরু করব। ২০০৫ সালে প্রথম ম্যাচ খেলেছিলাম। ২০ বছরের মধ্যে আমরা ৬০ বারের বেশি ওর বিরুদ্ধে কোর্টে নেমেছি। অন্তর থেকে নাদালকে শ্রদ্ধা। দারুণ অ্যাথলিট, সুন্দর একজন মানুষ।" নাদালকে থেকে যাওয়ারও আবেদন করেন জোকার। তাঁর মতে, "উইম্বলডনে এই বছর অবসর নিয়েছেন অ্যান্ডি মারে। তার সাক্ষী ছিাম আমি। রজার কয়েকবছর আগে বিদায় জানিয়েছেন টেনিসকে। এবার রাফা। সত্যি এটা মেনে নেওয়া কঠিন। এরা সবাই আমার কেরিয়ারেরই অংশ। প্রত্যেকের সঙ্গেই আমি খেলেছি। "
নাদালের সঙ্গে ভারতের এক সুদৃঢ় সম্পর্ক আছে। ২০০৪ সালে কেরিয়ারের প্রথম ডাবলস চেন্নাই ওপেনে খেলেছিলেন নাদাল। ভারতের এই এটিপি টুর্নামেন্টে সিঙ্গলস খেতাব জেতা হয়নি তাঁর। দুবার ফাইনালে উঠেও ট্রফি জিততে পারেননি তিনি। সেই আফশোস কেরিয়ারে দীর্ঘ সময় বয়ে বেরিয়েছেন নাদাল। কিন্তু নাদালের অবসরের সিদ্ধান্তে মনখারাপ ভারতীয় টেনিস প্রেমীদেরও। নভেম্বরে ডেভিস কাপে স্পেনের হয়ে শেষ ম্যাচ খেলবেন। ওই টু্র্নামেন্টেই শেষ হবে টেনিসের একটি যুগের।