প্রকৃতি মানে নারী। সেই প্রকৃতিরই আর এক রূপ কুমারীদের মধ্যে দেখতে পেতেন প্রাচীন মুনি-ঋষিরা। তাঁরা বিশ্বাস করতেন মানুষের মধ্যেই রয়েছে ঈশ্বরের অযুত প্রভাব। কারণ মানুষ চৈতন্যযুক্ত। আর যাঁদের সৎ মন কলুষতামুক্ত, তাঁদের মধ্যে আবার ঈশ্বরের প্রকাশ বেশি।
শাস্ত্র ও পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে (Kumari Puja History), কোলাসুরকে বধ করার মধ্যে দিয়ে কুমারী পুজোর প্রচলন শুরু হয়। শোনা যায়, কোলাসুর একসময় স্বর্গ ও মর্ত্য অধিকার করায়, বিপন্ন দেবকুল মহাকালীর শরণাপন্ন হয়। দেবতাদের কাতর আবেদনে সাড়া দিয়ে দেবী পুনর্জন্মে কুমারীরূপে কোলাসুরকে বধ করেন।
দেবী পুরাণে কুমারী পুজোর সুষ্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। শাস্ত্রানুসারে সাধারণত এক বছর থেকে ১৬ বছরের অজাতপুষ্প সুলক্ষণা কুমারীকে পুজোর উল্লেখ রয়েছে। ব্রাহ্মণ অবিবাহিত কন্যা অথবা অন্য গোত্রের অবিবাহিত কন্যাকেও পুজো করার বিধান রয়েছে। বয়স ভেদে কুমারীর নাম হয় ভিন্ন। নিয়ম অনুসারে এই পুজোর জন্য কুমারীর বয়স হতে হবে ১ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে। বয়স অনুযায়ী পুজোর সময় সেই সমস্ত কুমারীদের বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়। যেমন - কন্যার বয়স ১ বছর হলে সে সন্ধ্যা, ২ বছর হলে সরস্বতী, ৩ বছর হলে ত্রিধা, বয়স যদি ৪ বছর হয় তাহলে সে কালিকা। বয়সের গণ্ডি ৫ বছর হলে সে সুভগা, ৬ বছর বয়স হলে উমা, ৭ বছর বয়সী মেয়ে মালিনী, ৮ বছর বয়স হলে সে কুব্জিকা ,বয়স ৯ হলে সে কালসন্দর্ভা। এদিকে, বয়স যদি ১০ বছর হয়, তাহলে তিনি অপরাজিতা রূপে পূজিতা হন। ১১ বছর বয়সীকে রুদ্রাণী, ১২ বছর বয়সের কন্যা ভৈরবী, ১৩ বছর বয়সী মহালক্ষী, ১৪ বছর হলে পীঠনায়িকা, ১৫ বছর বয়সী হলে দেবী ক্ষেত্রজ্ঞা ও ১৬ বছরের কন্যাকে অম্বিকা দেবীরূপে পুজো করা হয়।
কুমারী পুজোর মাধ্যমে মূলত নারীজাতির প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হয়। ১৯০১ সালে স্বামী বিবেকানন্দ কলকাতার বেলুড় মঠে নয় কুমারীকে পুজো করেন। তখন থেকেই প্রতিবছর দুর্গাপুজোর অষ্টমী তিথিতে বেলুড় মঠে মহা ধুমধাম করে এই পুজো হয়ে আসছে।
মাদুরাইয়ের মীনাক্ষী দেবী মন্দিরে ও কন্যাকুমারীতেও মহা ধুমধামের সঙ্গে কুমারী পুজো হয়। কথিত আছে, কুমারীপুজো ছাড়া হোম-যজ্ঞ করেও দুর্গাপুজোর সম্পূর্ণ ফল পাওয়া যায় না। কুমারীপুজোর আগে সাধক কুমারীকে নতুন বস্ত্র, ফুলের মালা ও মুকুটে সাজান। পায়ে আলতা, কপালে সিঁদুর ও তিলক সৌন্দর্যে রাঙিয়ে তোলেন।