৫ সেপ্টেম্বর। ক্যালেন্ডারে লাল দাগ নেই, ছিল না কোনও দিন, তবু আমাদের মনে দিনটা দাগ কেটে গেছে সেই কোন শৈশবেই। ‘শিক্ষক’ শব্দের মানে বোঝার ঢের আগে থেকেই রঙিন কাগজ, বেলুন আর রাশি রাশি চকোলেট দিয়ে দিনটার ছবি এঁকে রেখেছি মনের মণিকোঠায়। ৫ সেপ্টেম্বর- শিক্ষক দিবস। ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণের জন্মদিন। হ্যাঁ, দেশের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি ও দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ। শিক্ষাবিদ ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ। তবে সেই পরিচয় বাদ দিয়েও শেষ পর্যন্ত যে কারণে মনে রাখা যায় তাঁকে, তা হলো শিক্ষক ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ।
রাধাকৃষ্ণণের একদল ছাত্রছাত্রী মেতে উঠেছিল তাঁদের শিক্ষকের জন্মদিন উদযাপনে। নিজের জন্মদিন নিয়ে পণ্ডিতসুলভ ঔদাসীন্য ছিল রাধাকৃষ্ণণের। তাই শিক্ষক নিজেই আর্জি জানালেন, “শুধু আমার জন্মদিন হিসেবে উদযাপন না করে দিনটা যদি সব শিক্ষকের দিন হিসেবে পালন করো, খুব খুশি হব”। ব্যস! শিক্ষকদের মনে রেখে একটা দিন উৎসর্গ করা হল তাঁদের জন্য। সেটা ১৯৬৭ সাল।
জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষক বললে একেক জন বলব একেক মানুষের কথা। কারো ক্ষেত্রে সেটা নিজের মা-বাবা, কারোর আবার স্কুলের প্রিয় ক্লাস টিচার, কারোর কলেজ প্রফেসর। যার কাছেই পাঠ নেওয়া, সেই-ই তো শিক্ষক। হতে পারে তা খাতায় কলমে পাঠ, হতে পারে জীবনের, হতে পারে যাপনের। একেবারে কচিকাঁচারা এই দিনটা তাঁদের পছন্দের শিক্ষককে ছবি একে, কার্ড দিয়ে ভালোবাসা জানিয়ে দেয়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে উদযাপনের রং বদলায়। মধ্য বয়সে এসে কেউ কেউ এই দিনটায় স্মৃতি হাতড়ে মনে করতে থাকেন, কে ছিল জীবনের সেরা শিক্ষক? কী ছিল সেরা শিক্ষা? হয়তো মন বুঝে নেয়, সেরা শিক্ষা দিয়েছে যে মানুষটা, তাঁর নিজেরই কোনোদিন প্রথাগত শিক্ষা ছিল না।
এই জীবনে, আমরা সবাই শিখছি রোজ। আমি আপনি আমাদের শিক্ষকদের কাছ থেকে, ওরাও হয়তো আমাদের কাছ থেকে। প্রকৃতিও রোজ পাঠ দিয়ে যাচ্ছে, জীবনও। শিখতে থাকাই তো নিয়ম, শিখিয়ে যাওয়াও। যা শিখছি, তা শিখিয়ে রেখে যাওয়া। সেই তো উত্তরাধিকার। জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ।