এতদিন মেয়েরা ব্রাত্য ছিলেন মায়ের আরাধনায়। কিন্তু এবার বেড়া ভেঙে ফেলতে উদ্যোগী হল ৬৬ পল্লী৷ দক্ষিণ কলকাতার এই পুজোয় এবার মা দুর্গার আরাধনা করবেন চারজন মহিলা।
সংস্কৃতের অধ্যাপিকা নন্দিনী ভৌমিক ও তাঁর দল 'শুভম অস্তু'-র কাঁধে এবার মাতৃ আরাধনার গুরু দায়িত্ব৷ নন্দিনী ছাড়াও দলে রয়েছেন আরো তিন মেয়ে- সেমন্তী, রুমা, পৌলমী।
ইতিমধ্যেই, পুরোহিত দর্পণ, দেবী পুরাণ, বৃহৎ নান্দিকেশ্বর পুরাণ, কালিকাপুরাণ ঘেঁটে ফেলেছেন তাঁরা। পুজোয় মন্ত্রোচ্চারণের সঙ্গে যুক্ত হবে সঙ্গীতের সুর। চলছে তারও প্রস্তুতি। নন্দিনী জানিয়েছেন, শাস্ত্রবিধি সম্পূর্ণ মেনেই হবে মহামায়ার আবাহন। এর আগে শহরের একাধিক বিবাহে পৌরোহিত্য করেছেন তাঁরা। কিন্তু মা দুর্গার পুজো এই প্রথম।
বিষয়টা কেবল পুজো করা নয়, মাতৃ আরাধনার আড়ালে সামাজিক বেড়া ভাঙার লড়াই। একবিংশ শতকে পুরুষের সঙ্গে সমান তালে যে কোনও ক্ষেত্রেই সফল হয়েছেন মহিলারা। তবে পৌরোহিত্যে কেন ব্রাত্য তাঁরা? নন্দিনী জানিয়েছেন, এই পুজোর জন্য তাঁরা প্রস্তুতি নিয়েছেন বহুদিন ধরে। অবশেষে ৬৬ পল্লীর আহ্বানে প্রস্তুত হচ্ছে বেড়া ভাঙার মঞ্চ।
নন্দিনী ভৌমিক ছিলেন কলকাতার লেডি ব্রেবোর্ন কলেজের সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যের ছাত্রী। সেখানে তাঁর অধ্যাপিকা ছিলেন গৌরী ধর্মপাল। তিনি বেদে উল্লিখিত বিবাহের নিয়মাবলি একসূত্রে গেঁথে এবং তার সঙ্গে এ যুগের উপযোগী নানা বিষয় যোগ করে একটি বিবাহপদ্ধতি তৈরি করেছিলেন, যার নাম ‘পুরোনো নতুন বৈদিক বিবাহ’, তিনিই এই যজ্ঞের পৌরোহিত্য করতেন প্রথমে।
ছাত্রাবস্থা শেষ করে নন্দিনীও অধ্যাপনা শুরু করেন। তাঁর দুই কন্যা রয়েছে। নন্দিনী জানান, গৌরী ধর্মপালই তাঁদের প্রস্তাব দেন বিবাহের পুরোহিত হওয়ার। তাঁরা দীক্ষিত হন। গত প্রায় ন’-দশ বছর ধরে তাঁরা বিয়ে দিচ্ছেন।
নন্দিনীদের বিবাহ পদ্ধতি কিন্তু একটু অন্যরকম। শুভদৃষ্টি, মালাবদল, সিঁদুরদান হলেও কন্যাদান বা কনকাঞ্জলির মতো আচারগুলিকে তাঁরা বাদ দিয়েছেন। এবার তাঁদের দুর্গাপুজো দেখার প্রস্তুতি শহরে।